সজনে গাছ ও ডাঁটার উপকারীতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

পোস্ট সূচিপত্রঃ সজনে গাছ ও ডাঁটা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

• সজনে পাতার উপকারিতা
• সজনে ডাঁটার উপকারিতা
• সজনে ফুল ও বীজের উপকারিতা
• সজনে পাতায় কি আছে
• সজনে পাতায় অ্যামাইনো এসিডের উৎস
• সজনে পাতায় দুধের প্রায় সমান পুষ্টি
• সজনে পাতার ঔষুধি গুণ
• সজনে পাতা কিভাবে খাবেন
• সজনে পাতার পুষ্টিকর ও গুনাগুন
• সজনে পাতা খেলে মিলবে এই ৮ টি উপকারিতা

সজনে পাতার উপকারিতা

সজনে পাতা পুষ্টিগুণে ভরপুর। এটি আয়রন, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, ভিটামিন এ, বি, সি ও প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ।

• পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ

সজনে পাতায় থাকা ভিটামিন ও খনিজ উপাদান দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি বিশেষ করে শিশু, গর্ভবতী নারী ও অপুষ্টিতে ভোগা ব্যক্তিদের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

• রক্তশূন্যতা দূর করে

সজনে পাতায় প্রচুর আয়রন থাকে, যা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।

• ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

গবেষণায় দেখা গেছে, সজনে পাতা রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।

• হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়

সজনে পাতায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পলিফেনল যৌগ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।

• ;হজমশক্তি বৃদ্ধি করে

সজনে পাতা ফাইবারসমৃদ্ধ, যা হজমশক্তি বাড়াতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

• ত্বক ও চুলের যত্নে কার্যকরী

সজনে পাতার রস ও তেল ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং চুলের গোড়া মজবুত করে।

সজনে ডাঁটার উপকারিতা

সজনে ডাঁটা বিশেষ করে আমাদের রান্নায় বহুল ব্যবহৃত হয়। এটি শুধু সুস্বাদুই নয়, বরং পুষ্টিগুণেও ভরপুর।

• হাড় শক্তিশালী করে

সজনে ডাঁটায় ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস থাকে, যা হাড় ও দাঁতের গঠনে সাহায্য করে।

• রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

এতে থাকা ভিটামিন সি ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

• দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে

সজনে ডাঁটায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে, যা চোখের সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

• অন্ত্রের জন্য উপকার

সজনে ডাঁটার ফাইবার অন্ত্রের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে এবং পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে।

সজনে ফুল ও বীজের উপকারিতা

• সজনে ফুল

সজনে ফুলও খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং এতে ভিটামিন সি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। এটি প্রদাহ কমাতে ও শরীরের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

• সজনে বীজ

সজনে বীজ থেকে তেল তৈরি করা হয়, যা ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত হয়। এটি পানির পরিশোধনেও ব্যবহৃত হয়, কারণ এতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে।  

সজনে পাতায় কি আছে

সজনে পাতায় কি আছে, সজনে পাতায় আমিষ আছে ২৭ শতাংশ। অর্থাৎ এক কেজি সজনে পাতা যদি আপনি খান, তাহলে এর ২৭ শতাংশ মানে কত?  ২৭০ গ্রাম হচ্ছে আমিষ। ৩৮ শতাংশ হচ্ছে শর্করা। ২ শতাংশ হচ্ছে ফ্যাট। ১৯ শতাংশ হচ্ছে ফাইভার বা আঁশ। আমরা জানি যে, এখন ফাইভবার বা আঁশকে খাদ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কম্পনেন্ট হিসাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। আজ কোন ঐচ্ছিক খাবার নয় যে, ইচ্ছা হলে খেলাম না হলে খেলাম না।প্রত্যেকদিন আপনার খাদ্য তালিকায় যেন পর্যাপ্ত আঁশ  থাকে এবং সেই সজনে পাতায় আঁশ আছে ১৯ শতাংশ। 

সজনে পাতায় অ্যামাইনো এসিডের উৎস

অ্যামাইনো এসিডের উৎস, সজনে পাতায় অ্যাসেনশিয়াল অ্যামাইনো এসিড আছে ৮ টি। ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি আছে। রয়েছে আরও প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম। ম্যাগনেসিয়াম পটাশিয়াম জিংক আইরন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এগুলো নিউট্রিয়েন্ট থাকার কারণে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, সজনে পাতা একটি অলৌকিক পাতা। সজনে পাতায় ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি আছে সেজন্য আমরা খাবারের সময় পারলে  প্রতিদিন সজনে  পাতা খেতে পারি। 

সজনে পাতায় দুধের প্রায় সমান পুষ্টি

সজনে পাতায় দুধের প্রায় সমান পুষ্টি, একটি  সজনে পাতা যদি তুলনা করেন কোন খাবারের সাথে, তাহলে আমরা শব্দের জনপ্রিয় একটি খাবারের সাথে তুলনা করতে পারি সেটি হচ্ছে গরুর দুধ। বিজ্ঞানীরা বলেছেন গরুর দুধের পুষ্টি এবং সজনে পাতার পুষ্টি অনেকটা কাছাকাছি। আমরা উপমহাদেশে বা বাংলাদেশে গরুর দুধ কেন খায়, কিসের জন্য খায়? মূলত কি লক্ষ্যে খায়? গরুর দুধ আমরা খাই মূলত ক্যালসিয়ামের জন্য, প্রোটিনের জন্য, আমিষের জন্য।গরুর দুধ খেয়ে আমরা বলি এটা একটা সুষম খাবার। 

আমরা প্রতিদিন রাতে খাওয়ার পরে অনেকেই  গরুর দুধ খেয়ে থাকি। গরুর দুধ এবং সজনে পাতার মধ্যে পুষ্টিগত কোন পার্থক্য নেই।গরুর দুধে যা আছে সজনে পাতাতেও তাই আছে। তাহলে আমরা যদি প্রতিদিন রাতে খাবারের পর গরুর দুধ খেয়ে থাকি, তাহলে আমাদের দৈনিক সজনে পাতা খেলেই  গরুর দুধের সমান পুষ্টি পাওয়া যাবে। যে লক্ষ্যে আমরা মূলত গরুর দুধ খাই, সেই পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম আছে সজনে পাতায়।  এবং পর্যাপ্ত  আমিষ ও আছে সজনে পাতায়। 

সজনে পাতার ঔষুধি গুণ

সজনে পাতার ঔষধি গুণ, সজনে পাতার কিছু ওষুধে গুণ আছে, এবং ওষুধে গুনের  কারণে অর্থাইটিস নিরাময়ে এটি দারুন কার্যকর।এটি কিন্তু আমরা নিজে আগে এপ্লাই করেছি। যাদের হাঁটু ব্যথা আছে, সজনে পাতার জুস খান। সজনে পাতার ভর্তা খান অথবা গুড়া খান। ছয় মাস  খেয়ে দেখেন আপনার  অর্থ্যাইটিস এর কি অবস্থা হয়।

শরীরের এর বর্জ্য পদার্থকে বের করার  আপনি সজনে পাতা খেতে পারেন। ৭  দিন, ১৫ দিন আপনি একটা বিশেষ প্রোগ্রাম ফলো করবেন,বিশেষ খাবার খাবেন, আপনার শরীরে জমানো বর্জ্য  পদার্থগুলো বেরিয়ে যাবে। তো সজনে পাতা সে কাজটা করতে আপনাকে সাহায্য করবে। আপনার ভেতরের বর্জ্য পদার্থগুলো বের করে দেবে। 

সজনে পাতা কিভাবে খাবেন

সজনে পাতা কিভাবে খাবেন, আমরা মনে করি যে ফুল সিজনে সবচেয়ে উত্তম উপায় হচ্ছে এটিকে আপনি জুস করে খাবেন। কিছু সজনে পাতা নিন।ভালো করে পরিষ্কার করে নিয়ে এটিকে ব্লেন্ডারে কিছু পানিযোগ করে টেস্টের জন্য কিছু আদা, কিছু  জিরা, বিট লবণ দিতে পারেন। ভালো করে ব্লেন্ড করবেন। এরপর ছেকে নিন। ছেকে নেওয়া হয়ে গেলে খাবার সময় একটু মধু দিয়ে খেয়ে নিন। পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ জুসটি আপনার খাওয়া হয়ে গেল। যদি আপনার জুস  বাড়াতে ঝামেলা হয় অথবা সব দিন যদি জুস খেতে না পারেন, তাহলে ভর্তা খান। তবে এটা কাঁচা বেস্ট হবে। 

আপনি যখন সিদ্ধ করলেন, এ যে নানা বেড যে উপাদান গুলো আছে এটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সেজন্য কাঁচা পাতা ভালো করে বেটে নিয়ে এটাকে টেস্ট করার জন্য যা যা লাগে সেখানে আপনি রসুন দেন আদা দেন মরিচ দেন পেঁয়াজ দেন যা যা ডিলিট টেস্ট হয় সেটাই দেন। তারপর আপনি খান সেটা খেতে হবে সিজনে। আর বাকি আছে অফ সিজন, অফ সিজনে তো গুড়ো খাবেন। সজনে পাতা কে আপনি সিজনে ভালো করে রোদে শুকান। শুকানোর পর এটাকে ক্রাশ করে ফেলেন। ছয় মাস এটা চমৎকার থাকবে এবং ১ থেকে ২ চা চামচ সিজনে পাতা যথেষ্ট আপনার পুষ্টির জন্য। 

তাই আমরা বলি যে নিজের দেশে এই পাতাটিকে কেউ অবহেলা করবেন না। আজ না হলে কাল থেকে শুরু করুন। অফ সিজিনে আপনি গুড়ো সংগ্রহ করুন। প্রতিদিন এক চা চামচ সকালে এক চা চামচ রাতে খাবেন। আপনি আপনার কর্মক্ষমতা দেখে নিজেই আনন্দিত হবেন। তাহলে আর দেরি না করে আজ থেকে শুরু করে দেন সজনে পাতা খাওয়া।

সজনে পাতার পুষ্টিকর ও গুনাগুন

সজনে পাতা পুষ্টিকর ও গুনাগুন, সজনে ডাঁটা অনেকের খুব প্রিয় একটা সবজি। আর মাত্র কিছুদিন পর থেকেই আমরা সজনে ডাঁটা খেতে পারবো।  গাছে অলরেডি ধরেই গেছে বাট এখনো অনেক চিকন এখন খাওয়া যাবেনা কিছুদিন পর থেকে খেতে পারব। সজনের তরকারি ও সজনে- ডাল অনেকের খুব প্রিয় একটি খাবার ।  তাছাড়া সজনে পাতাকে বলা হয় সুপার ফুড। সজনে ডাঁটা দিয়ে হরেক রকমের তরকারি রান্না করা যায়। 

সবথেকে জনপ্রিয় রেসিপি হলে সরিষা ও আলু দিয়ে সজনের ডাঁটার ঝোল আর ডাল এবং আলু আর সজনের ডাঁটার ঝোল। এছাড়া সজনে ডাটা ও বড়ির ঝোল, সজনে ডাঁঠা ও রুই মাছের ঝোল, সজনে ডাঁটা ও চিংড়ি মাছের ঝোল, সজনে আর কুমড়ো বড়ি। আম আলু দিয়ে সজনে ডাঁটার ঝোল ইত্যাদি ও রান্না করা যায়। শুধু সজনে ডাঁটা নয়, সজনে পাতা শাক ও খাওয়া যায়।  সজনে পাতার শাকে অনেক  গুনা-গুন আছে। সজনে  ডাঁটা দিয়ে রান্না করা মজাদার তরকারি এই গরমে আমাদের তৃপ্তি  করে, সজনে ডাঁঠা এবং স্বাদ এর গুনাগুন অনেক।

সজনে পাতা খেলে মিলবে এই ৮ টি উপকারিতা

সজনে পাতা খেলে  মিলবে এই ৮ টি উপকারিতা তাহলে চলুন আমরা জেনে নিই সজনে পাতা খাওয়ার ৮ টি উপকারিতা, সজনে পাতায় রয়েছে ভিটামিন এ,বি ১ বি ২, বি ৩, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস ।  এছাড়াও ৮ অ্যামাইনো এসিড এর উৎস উপকারী সজনে পাতা।  আর ৩৮ শতাংশ আমিষ আছে পাতায় যা অন্য কোন উদ্ভিদে নেই । তাহলে চলুন  জেনে নি সজনে পাতা খাওয়ার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে। 

• সজনে ডাঁটায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আশঁ যাওয়া কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। প্রতিদিন নিয়ম সজনে ডাঁটা দিয়ে যেকোনো তরকারি রান্না করে খেতে পারেন। এতে করে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যার সমাধান হবে। 
• বসন্ত প্রতিরোধে সজনে ডাঁটার তরকারি বা ডাল রান্না করে খেলে জল বসন্ত ও গুটি বসন্ত  অনেক অংশ কমে যায়। 
• শরীরের জ্বর ও বিভিন্ন ধরনের অসুখ দেখা দিলে অনেকেরই মুখে রুচি চলে যায়। যার ফলে কোন কিছুই খেতে আর ভালো লাগেনা। মুখে রুচি বাড়াতে সজনে পাতা ভেজে বা ভর্তা করে খেলে মুখে রুচি ফিরে আসে। এবং শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায়। 
• সজনে পাতায় উপস্থিত ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ দুধের চেয়েও বেশি। এই পাতা শাক হিসেবে খেলে শরীরের ব্যথা ও ক্লান্তি দূর হয়। 
• হজমের সমস্যা সমাধানে সজনে  বেশ  উপকারী। যাদের পেটের গোলমাল বা হজমের সমস্যা আছে তারা সজনের তরকারি খেলে বেশ আরাম পেতে পারেন।
• উচ্চ রক্তচাপের  রোগীদের জন্য সজনে ডাঁটা বেশ উপকারী।  এটিতে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।  শুধু ডাঁটা নয়,  সজনে পাতাও উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
• ফ্যাটি লিভার ডিজিজ থেকে লিভারকে রক্ষা করতে সাহায্য করে সজনে পাতা।  রক্তের শর্করা এবং ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে সজনে পাতা। সজনে পাতায় থাকা আয়রন রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।
• সজনে পাতার এমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।  যেমন এতে নিয়াজিমিসিন রয়েছে।  এটি এমন একটি যৌগ যা ক্যান্সারের কোষের বিকাশ কে দমন করে।  সজনে পাতায় এমন অণু রয়েছে যা হাঁপানি, শ্বাসনালী সংকোচন এবং শ্বাসনালীতে প্রদাহ প্রতিরোধ করতে পারে।

পরিশেষে আমার মতামত

সজনে গাছ প্রকৃতির এক অনন্য দান, যা পুষ্টি ও ওষধিগুণে সমৃদ্ধ। এর পাতা, ডাঁটা, ফুল ও বীজ প্রত্যেকটিই মানুষের স্বাস্থ্যরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত সজনে পাতা ও ডাঁটা খাওয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে পারি। তাই সজনে গাছকে আমাদের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিৎ এবং এর চাষাবাদও বাড়ানো প্রয়োজন।